শিক্ষা যাই হোক না কেন, আপনাকে দাস নয় অনন্য করে তুলতে হবে, বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস দিতে হবে, এমন নীতি খুঁজে দিতে হবে যা সামনের রাস্তায় পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে, মন্দ, দুঃখ কিংবা কঠিন সময়ে আপনাকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে, আপনার ভাগ্যে যাই হোক না কেন, তাকে ভালোবাসতে শিখাতে হবে, আপনাকে আবিষ্কার করতে সাহায্য করতে হবে, আপনাকে বুঝাতে হবে আসলে কী গুরুত্বপূর্ণ আর কি না: জানাতে হবে কিভাবে বাঁচতে হয় এবং কিভাবে মরতে হয় । -জন টেলর গ্যাটো
জন টেলর গ্যাটো, খুব সুন্দরভাবে শিক্ষার ভূমিকা তুলে ধরেছেন। আসলেই তো, জীবনের জন্যই তো শিক্ষা, কিভাবে ভালো ভাবে বাচা যায়, উত্তম জীবন গঠন করা যায়, এই জন্যই তো আমাদের শিক্ষার প্রয়োজন। তাই না?
কিন্তু সব কেমন যেন! লোক মুখে শুনে থাকি শিক্ষিতরাই নাকি, সব অনাচার, অন্যায়, সুদ কি ঘুষ, কিংবা সকল জীবন বিধ্বংসি কর্মকান্ডের জন্য দায়ী৷ জানি না সত্যতা কতটুকু, কিন্তু বাস্তবতাও যেন এই কথার বিপরীত না, মানুষ যত শিক্ষিত হচ্ছে, সমাজ, জলবায়ু, পরিবেশ দূষণ, অর্থনীতি বিপর্যয় কিংবা রাজনৈতিক দ্বন্দ বৃদ্ধিই পাচ্ছে। আবার পরিবারগুলোতেও ডিভোর্স, অশান্তি, পিতা মাতার সাথে দুঃব্যবহার, মাদকাসক্তও এই শিক্ষিতদের দ্বারাই বেশি হচ্ছে৷
যেখানে শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল সমস্যা নিরসন করা সেখানে শিক্ষাই নাকি বাড়াচ্ছে যুদ্ধ, অন্যায়, পারিবারিক কোলাহল থেকে শুরু করে নানান জটিলতা। তাহলে কি শিক্ষা ব্যর্থ তার উদ্দেশ্য পূরণে?
না, শিক্ষা ব্যর্থ হয় নি, বরং মানুষ ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষাকে বুঝতে, শিক্ষার মানে, শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিক্ষার ধরণ ও শিক্ষার মূলনীতিকে বুঝতে। প্রাচীন কালে যখন মানুষ যাযাবর জীবন যাপণ করত, তাদের কাছে শুধু বেচে থাকার জন্য, লড়াই করা, শিকার করাই প্রয়োজন ছিল, শিক্ষা ও অর্থের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু যুগে যুগে শিক্ষার চাহিদা তৈরি হয় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে, রাজা বাদশাদের যুগ থেকে সরকার আমলাতন্ত্রের যুগে বিশাল পরিবর্তন হয় শিক্ষার ইতিবৃত্তের। আর শিল্প বিপ্লবের পর থেকে তো শিক্ষা রুপ নেয় এক নতুন মাত্রা।
তবে সে যেই রুপই নিক না কেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য সেই একটাই মানুষের কল্যাণ, শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানুষের নানান সমস্যার সমাধান করা। যদিও এখন মাকড়সার বেড়াজালে আটকানো শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের মাঝে পরেছে বিশাল এক অনিশ্চিয়তা।আর মানুষ কর্তৃক এই সকল বিপর্যয়ের দায় যেন শিক্ষার উপরেই পরে থাকে। আবার বছরের পর বছর শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ জেনেও, পদক্ষেপ নেওয়া হয় না পরিবর্তনের। যুগের চাহিদার বিপক্ষে থাকা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে শিক্ষার্থীদের চলে এক মনস্তাত্বিক দ্বন্দ৷
শিল্প বিপ্লবের পর শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যবহার করে এক শ্রেণির পুজিপতি তাদের কর্পোরেশনের জন্য কারিগর তৈরিতে আবদ্ধ করে ফেলে শিক্ষার্থীদের, আর শিক্ষার্থীরা এই কর্পোরেশনগুলোর কারিগর হওয়ার প্রতিযোগিতাকেই শিক্ষা বলে ভাবতে থাকে। ফলশ্রুতিতে তথ্য বিপ্লবের যুগে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে, কেননা এই শিক্ষা পদ্ধতি শিল্প বিপ্লবের মত সেই কর্পোরেশনের শ্রমিক হিসেবে তৈরি করাতেই সিমাবদ্ধ। এখন শিক্ষার্থীদের থেকে নতুন কোন সম্ভবনাময় ইনোভেশন আসে না, আসে না নতুন নতুন আগত সমস্যার সমাধান৷ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে হতাশার সাথেই শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার অনুসন্ধান করতে থাকে।
কিন্তু অবশেষে সময় ও মেধা দুটই অপচয় হয় শুধু নিজেকে আগামী বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য তৈরি করা আর হয় না। তাই আমাদের নতুন করে জানতে হবে শিক্ষা কি? শিক্ষা কেন? শিক্ষার উদ্দেশ্যই বা কি? শিক্ষার ইতিহাস ও ভবিষৎ। আমাদের নিজেদেরকেই প্রস্তুতি নিতে হবে আগামী বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য। গ্রহণ করতে হবে এমন শিক্ষা যা সত্যিই আমাদের জন্য উপকারি, মানুষ, সমাজের জন্য আবশ্যক। আগত রোবটিক্স যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য, যেন আমাদের পিছিয়ে পড়তে না হয় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজের শিক্ষা নিজেরই নিশ্চিত করতে হবে, তথ্য বিপ্লবের যুগে মুঠোফোনেই এখন সম্ভব উন্নত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করা। শুধু প্রয়োজন আগ্রহ ও প্রচেষ্টা। আর প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। সুতরাং আপনাকে স্বাগতম, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ফাদ থেকে বের হয়ে আধুনিক ও যুগপযোগি শিক্ষার উদ্দেশ্য।